বরগুনা প্রতিনিধি ॥ ‘আমি জীবিত থেকেও কেন মৃত? কে আমাকে মৃত বানালো? শুধুমাত্র এ সমস্যার জন্য আমি সরকারি সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। ’ কথাগুলো বাংলানিউজকে বলছিলেন, বরগুনা সদর উপজেলার ছয় নম্বর বুড়িরচর ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়-লবনগোলা গ্রামের ৬৮ বছরের বৃদ্ধ ইউসুফ। সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করেছেন। আশ্বাস পেয়েছেন সমাধানের। তবে দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের দাবি করেছেন তিনি। ইউসুফ বলেন, কাগজপত্রে মৃত থাকায় করোনা টিকা দেওয়া হয়নি, ভোট দিতে পারিনি ইউপি নির্বাচনে, পাচ্ছি না বয়স্ক ভাতাও।
জানা যায়, চলতি মাসের শুরুর দিকে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে গেলে তার নামটি এন্ট্রি করা যাচ্ছিল না। এ সমস্যার সম্মুখীন হয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিসে গেলে জানতে পারেন কাগজপত্রে তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। কিন্তু কীভাবে জীবিত থেকেও মৃত হলেন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তাকে দেওয়া হয়নি। তবে তৎকালীন ইউপি সদস্য ফারুক শিকদারের গাফলতির কারণে এমনটা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। ইউসুফ বলেন, এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারিনি, তখন আমি কিছু বুঝতে পারিনি। পরে আমার জাতীয় পরিচয় পত্রের আইডি কার্ড নিয়ে নির্বাচন অফিসে যাই, সেখানের কর্মকর্তারা বলেন কাগজপত্রে আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে, তাই ভোটার তালিকা থেকেও আমার নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। এতে আমি সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। নিতে পারিনি করোনার টিকা। পাচ্ছিনা বয়স্ক ভাতাও।
তিনি আরও বলেন, সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা থেকে আমার পরিবার বঞ্চিত। আমি বেঁচে থাকতেও আমাকে মৃত বানিয়েছে দুই নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ফারুক শিকদার ও স্কুল শিক্ষক মো. বারী। ভোটার তালিকা তৈরির সময় আমার যাবতীয় কাগজপত্র তাদের কাছে দিয়েছিলাম। তবুও আমার সাথে কেন এরকম করেছে বুঝতে পারছিনা। এদিকে বিষয়টি সম্পর্কে সাবেক ইউপি সদস্য এবং ভোটার তালিকা যাচাই কমিটির সদস্য ফারুক শিকদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তথ্য সংগ্রহকারী সহকারী শিক্ষক আব্দুল বারী নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, আমি শতশত মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেছি। এর মধ্যে এই একটি ভুল হয়েছে। ইউসুফের সাথে যেটা হয়েছে সেটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। ভুক্তভোগী বলেন, নির্বাচন অফিসে কথা বলেছি, বিষয়টি তারা আমলে নিয়েছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ দাবি জানাই। বৃদ্ধকালে আমি বড়ই অসহায় জীবন যাপন করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা ইলিয়াস বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমরা আগে কখনও শুনিনি তবে এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা দায়িত্ব অবহেলার কারণে অসহায় ব্যক্তির এত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করা হলে আগামীতে এ ধরনের কাজ করতে সর্তকতা অবলম্বন করবে। বরগুনার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফসল পাটোয়ারি বলেন, ভুক্তভোগী ইউসুফ শিক্ষিত না থাকার কারণে তার আইডি কার্ডের সমস্যা চিহ্নিত করতে এতটা বছর লেগেছে। ফলে তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এ ধরনের ঘটনা সমাজের জন্য লজ্জাজনক। বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, এরকম ঘটনা খুব কমই ঘটে। তবে বিষয়টি আমি জানার পরে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য এবং স্কুল শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। তারা তাদের ভুল স্বীকার করে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন। আমি যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী ইউসুফের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি।
Leave a Reply